খালেদা জিয়ার নির্জন কারাবাস: কার লাভ কার ক্ষতি - জিনিয়াস ২৪ বিডি

নতুন কিছু জানতে সব সময় চোখ রাখুন

Smiley face

সর্বশেষ

Home Top Ad

For add : 01689145308

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Sunday 18 February 2018

খালেদা জিয়ার নির্জন কারাবাস: কার লাভ কার ক্ষতি




শীর্ষ কাগজের সৌজন্যে
 ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার এসেই নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে  ‘টু মাইনাস’ ফর্মুলা হাতে নিয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে দল ভাঙা, দলের ভেতর সংস্কারপন্থি তৈরি করা ছাড়াও দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের এবং উভয়কে কারান্তরীণ করা হয়। কিন্তু মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সেই লক্ষ্য সফল হয়নি।
অবশ্য, এতে মূল কৃতিত্ব ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ পাঠাতে সক্ষম হলেও শত চেষ্টা করেও বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো যায়নি। তাতে ‘টু মাইনাস’ ফর্মুলাও আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর ফল হিসেবে তৎকালীন ওয়ান-ইলেভেন সরকার নিজেদের সেইভ এক্সিটের পথ খুঁজতে থাকে। নিজেদের বাঁচার তাগিদে অবশেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হয়। অথচ ওয়ান-ইলেভেন সরকারকে ব্যর্থ করা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি করার যিনি মূল কৃতিত্বের দাবিদার সেই বেগম খালেদা জিয়াকেই এখন ওয়ান ইলেভেনের মামলায় জেলে যেতে হলো। তাও ‘ঠুনকো’ এমন একটি ঘটনা নিয়ে যে ঘটনায় বেগম জিয়া কোনভাবেই জড়িত নন। কোথাও তাঁর সই-স্বাক্ষরও নেই।  যে অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতির অভিযোগ এখন পর্যন্ত সেই ট্রাস্টের কোনো অর্থও খরচ হয়নি। আত্মসাতের তো প্রশ্ন্ই আসে না।  বরং, এফডিআর’র মাধ্যমে অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিলের অর্থ বেড়েছে। তাছাড়া অনেক ঘষা-মাজা করে মামলাটি তৈরি করা হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ওয়ান-ইলেভেনের মামলাগুলো বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধের মামলাগুলো সচল হয়। তারই একটি হলো এই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। সেই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জেলখানায়ও তার সঙ্গে নানাবিধ অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিহিংসা হয়ত সফল হচ্ছে, কিন্তু অন্য যেসব উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হয়েছে তা আদৌ সফল হবে কিনা এ মুহূর্তে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করছেন, হিতে বিপরীত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারাও ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে বেশ চিন্তিত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
জেলেও অবিচার!
জেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যদিও ইতিপূর্বে জানানো হয়েছিল যে, জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে প্রাপ্য সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিক কারণেই তার ডিভিশন পাবার বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে না। কোনও আবেদন ছাড়াই তার ডিভিশন পাওয়ার কথা। অথচ সেটি নিয়েও টালবাহানা চলছে, শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত। এমনকি ডিভিশনের জন্য আবেদন করার পরও সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। সাধারণ বন্দী হিসেবেই তাকে রাখা হয়েছে। পুরান ঢাকার যে কারাগারে রাখা হয়েছে সেখানে অন্য কোনও বন্দী নেই। ইতিপূর্বে সেই কারাগারটি পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। বেগম জিয়া যে কক্ষে আছেন সেটি একেবারেই সাধারণ একটি কক্ষ। পরিচারিকা ফাতেমাকে বেগম জিয়ার কাছে দেওয়ার আবেদনও গ্রহণ করা হয়নি। অবশ্য, এতো কিছুর পরও বেগম খালেদা জিয়ার মনোবল দৃঢ় রয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
টার্গেট সফল হবে কি?
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলত এই সময়ে মামলাটি চূড়ান্ত করে রায় ঘোষণার ব্যবস্থা হয়েছে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এরমধ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হলো ‘মাইনাস ওয়ান’ অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে ‘মাইনাস’ করা। দুর্নীতি ইস্যুকে সামনে এনে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ধস নামানো, দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, জ্বালাও-পোড়াও অপবাদ দিয়ে গ্রেফতার-নির্যাতনের মাধ্যমে দলটিকে কাবু করে ফেলা এবং সরকারের অনুগত বিকল্প বিএনপি তৈরি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া প্রভৃতি নানান প্রক্রিয়ায় এই ‘মাইনাস-ওয়ান’ ফর্মূলা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে তার সবই ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমতঃ এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এতে তার সুনাম নষ্ট হবে। জনপ্রিয়তাও কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর ঘটনা সম্পূর্ণ হিতে বিপরীত হচ্ছে। দুই বারের একজন সফল সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য ৫ বছরের সাজার বিষয়টি মানুষকে বিস্মিত করেছে। টাকার অংক যদি ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা হতো তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতো। আর টাকাটাও রাষ্ট্রের না। এটা তার স্বামীর নামে করা একটি এতিম খানার। একজন প্রধানমন্ত্রীর যেখানে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ থাকে সেখানে এতিম খানার ফান্ডের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা মানুষের কাছে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এই টাকার এখনও কিছুই খরচ হয়নি। বরং ব্যাংকে এফডিআর করার কারণে এতিমখানার ফান্ডের টাকা ইতিমধ্যে অনেক বেড়েছে।
বরং মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, শেয়ারবাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লুটপাটকারীদের নাম প্রকাশের পরও তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব নিয়ে এখন বিশিষ্টজনেরাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসব নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটকারীদের আশ্রয় দিয়ে মাত্র ২ কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঠিয়ে সরকার এখন বলা যায় কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আর দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়ার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করা হলেও ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভালবাসা ও সহমর্মিতা আগের চেয়ে আরও বহুগুণে বেড়েছে। মনে হচ্ছে মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে এখন বন্দি খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বেশি।
দ্বিতীয়ত: সরকারের টার্গেট ছিল খালেদা জিয়াকে জেলে ভরে বিএনপির মধ্যে ফাটল ধরানো। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। কিন্তু এখানেও সরকারের টার্গেট মিস হয়ে গেছে। কারণ, খালেদা জিয়ার এ রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক সুসংহত হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরে আগে যে কোন্দল ছিল এখন সেটাও দূর হয়ে গেছে। কারণ, জেলে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া হুঁশিয়ার করে গেছেন, এবার ভুল করলে আর ক্ষমা করা হবে না। তাই খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা এখন সব ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন।
তৃতীয়ত:  খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক দেবে মনে করা হয়েছিল। বিএনপির এ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে স্যাবোটাজ এবং বিশেষ লোক দিয়ে যানবাহনে আগুন দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টির আশংকা ছিল। তাতে দোষ চাপাতো বিএনপির ওপর। বিএনপি নেতাদেরকে গণহারে গ্রেফতার করার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তেমন পরিস্থিতিও হচ্ছে না। বিএনপি এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সহিংস কর্মকা- হয়নি। বরং পুলিশ উল্টো তাদের মিছিলে বিনা উস্কানিতে হামলা-লাঠিচার্জ ও গুলি করেছে। সোমবার থেকে বিএনপি যে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে সেগুলোও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ধরনের।
‘মুক্ত’ খালেদা জিয়ার চেয়ে বন্দী খালেদা জিয়া বেশি ‘শক্তিশালী’
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে ভরেছে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং সরকার আরও উল্টো চাপে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাকে কারান্তরীণ করায় দলটির নেতাকর্মীসহ দেশবাসী মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। দলটি এখন সাম্প্রতিক বছরগুলোর যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। যেটা মনে করা হয়েছিল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বা মনোবল ভেঙে পড়া- সেটা আদৌ হয়নি। বরং রায়ের পর ‘সরকারের পাতানো ফাঁদে’ পা না দেয়ায় বেড়েছে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে হতাশ হয়েছে বলা যায়, আওয়ামী লীগ। এমনটাই মন্তব্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। একই কথা বলছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অভিজ্ঞজনরাও। তারা বলছেন, এ রায়ে বেগম জিয়া ও বিএনপি’র জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়া এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এমনকি এ মুহূর্তে দেশে জনপ্রিয়তায় খালেদা জিয়া এক অপ্রতিরোধ্য নাম। ভারতীয় গণমাধ্যমও বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ এদিকে, পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছরের নারী- খালেদা জিয়া রায় শুনতে আদালতে ও রায়ের পর কারাগারে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই তার সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। দেশ, জাতি ও দলের জন্য এমন দৃঢ়তা ও সাহসিকতা দেখানোর দৃষ্টান্ত স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস স্থাপন করেছে বলেও মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই আশার আলো দেখছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
‘কারাগার হলো রাজনীতিকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়’ এই প্রবাদবাক্য দেশের কোন নেতার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে সে হিসেব অজানা হলেও ‘কারাগার’ যে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আলোকিত করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। গোটা বিশ্বের দৃষ্টি যেন ঢাকার দিকে, বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। জাতিসংঘ বেগম জিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে মামলা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত খালেদা জিয়ার কারাবরণ শতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ঢাকায় কর্মরত প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা নড়েচড়ে উঠেছেন। অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য ঢাকায় কর্মরত নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ‘বন্দী খালেদা জিয়ার’ ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছেন। ইন্ডিয়া এক্সেপ্রেস বলছে, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে।’ দেশের সর্বত্রও একই অবস্থা। সবার মুখে মুখে খালেদা জিয়ার নাম।
টিভির টকশোগুলোতে এখন একই আলোচনা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ টিভি মিডিয়া সরকারের পক্ষের লোকদের মালিকানায় হওয়ায় টকশোতে সরকারি দল অনুগত ব্যক্তিদের বেশি আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীক কারণে দর্শক ধরে রাখার কৌশল হিসেবে ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকেও মাঝেমধ্যে টকশো’য় ডাকা হয়। তারমধ্যে বশির ভাগ আলোচনায় উঠে এসেছে ‘মুক্ত খালেদা জিয়ার’ চেয়ে ‘বন্দী খালেদা জিয়া’ অনেক বেশি শক্তিশালী।
কারামুক্তি বিলম্ব হতে পারে
বেগম খালেদা জিয়াকে কতদিন জেলে থাকতে হতে পারে তা নিশ্চিত নয়। এর কারণ, যেহেতু একবার তাকে জেলে ঢুকানো হয়েছে তাই এ মুহূর্তে ছাড়লেও বিপদ মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এখন শুরুতে রায়ের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে টালবাহানা চলবে। এরপর হাইকোর্টে জামিন পেলেও চেম্বার জজ আদালতের মাধ্যমে সেই জামিন স্থগিত করার ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে সরকারের তরফ থেকে। পাশাপাশি অন্য কয়েকটি মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে। এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন তারা রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। কপি পেলে খালেদা জিয়ার ওই দ-ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবেন এবং জামিন চাইবেন। তবে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা তিন মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে এসব মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা কুমিল্লা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অন্যান্যের সঙ্গে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সাত শীর্ষ নেতাকে হুকুমের আসামি হিসেবে দেখানো হয়। ২০১৭ সালের পৃথক সময় ও গত জানুয়ারিতে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এসব মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার আমলি আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর তিন মামলায় পরোয়ানা ঢাকায় পাঠানো হয়।
এছাড়া সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। কারণ মামলাটি বর্তমানে যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায়ও যদি আদালত খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে তার কারামুক্তি বেশ সময়সাপেক্ষ হয়ে যেতে পারে।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা। সরকার যদি খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখার কৌশল অবলম্বন করে তাহলে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলনের নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আইনি মোকাবেলার পাশাপাশি রাজপথেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপির শীর্ষনেতারা জানিয়েছেন।
নির্বাচন করতে পারবেন কি
রায় ঘোষণা হওয়ার আগ থেকেই দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল। রায়ের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, তাকে ভোট থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
এ নিয়ে দুটো মত রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জেল দুই বছরের বেশি হলেও আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুই বছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকবার যোগ্যতা হারান যে কেউ। মুক্তি লাভের ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়া যায় না। এই আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া ভোট করার যোগ্যতা হারিয়েছেন; তবে আপিল করলে বিষয়টি হবে ভিন্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন “নিম্ন আদালতে সাজা হলে এ নিয়ে আপিল হবে। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই। কারণ, তার এ রায় চূড়ান্ত নয়” নবম সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ আসন থেকে এভাবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার ১৩ বছর সাজা হয়েছিল।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন এই বছরই হবে। এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পেরিয়ে মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, হাইকোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে গেলে বা জামিনে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারা যায়। “তবে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের সাজা টিকে গেলে তখন যদি তিনি সংসদ সদস্য হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।”
বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দ-প্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন। এখন উনার (খালেদা) ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।”
কার লাভ কার ক্ষতি
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ বাঘের পিঠে উঠে গেছে, তাদের পক্ষে এখন স্বাভাবিক কিছু ভাবার সুযোগ নেই। আর সেই কারণেই বেগম খালেদা জিয়া বা বিএনপির বিষয়ে এমন চরম পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে তাদের। ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে ৪১ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্ত ক্ষমতাসীন ভাবছিল। এখন সেই অবস্থা আর নেই। এ মুহূর্তে ভাবনা হলো, সামনের এই টার্মটা অন্তত ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা। এ জন্য ৫ জানুয়ারির আদলেই একটি নির্বাচন প্রয়োজন। ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে জরিপ করে দেখা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কোনোভাবেই তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। এমনকি এরশাদকে সঙ্গে নিলেও সম্ভব হবে না। বরং চরম ভরাডুবির আশংকা রয়েছে।
কিন্তু, আদৌ কী এবার ৫ জানুয়ারির মতো পার পাওয়া যাবে? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। এদিকে ভারত, পশ্চিমা বিশ^সহ প্রভাবশালী সব দেশই বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জোর দিয়ে বলে আসছে। বিএনপিও এবার অতি মাত্রায় সতর্ক। সব মিলিয়ে সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ে মহা ফ্যাসাদেই পড়েছে বলা যায়। বিশেষ করে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের পর থেকে। খালেদা জিয়ার কারাবাসের মেয়াদ যতই বাড়ছে তার প্রতি সাধারণ মানুষ ততই সহানুভূতিশীল হচ্ছে। বিএনপিও তত সংগঠিত হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here
Top