এপার বাংলা ওপার বাংলা। মাঝখানে নদী আর কাঁটাতারের বেড়া। তারপরও ভালবাসার টান যাদের কোনো কিছুকে আটকে রাখতে পারে না। প্রেম, সম্পর্ক, আত্মীয়তা সবই হয় সীমান্তের দুই বাংলার মধ্যে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাঁটাতারে হার মেনে যায় ভালবাসা। তখন বিরহ বিচ্ছেদে কষ্ট হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। ভালবাসার দিনে মেহেরপুরের সীমান্ত গ্রামগুলোতে দুই বাংলার মানুষের মনে ভালবাসার নতুন মাত্রা উদয় হয়।
মেহেরপুর জেলার তিনদিকে ভারতের সীমান্ত পথ। কোথাও আছে নদী। আবার কোথাও আছে কাঁটাতারের বেড়া। বিভিন্ন বিভিন্ন পূজা-পার্বণে আর নদীতে গোসলের সময় দেখা হয় দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। অল্প সময়ে ঘটে প্রেম। গড়ায় বিয়েতে। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে অনেকেই সংসার পেতেছেন দুই বাংলায়। এমন ভালবাসায় কোনো কিছুই তাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। অনেক সময় ভালবাসার টানে মোবাইলে কথা বলতে আবার চোখের দেখার জন্য ছুটে যেতে হয় সীমান্তের কাছাকাছি।
২০১৫ সালে মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাঝা গ্রামের রুবেল হোসেনের সাথে ভারতের নদীয়া জেলার চিলখালী গ্রামে রিনা খাতুনের পরিচয় ও বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তারকাঁটা পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে ঘর সংসার শুরু করে রিনা খাতুন।
এদিকে ধর্ম জাত-পাত ভুলে হায়াত আলী কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ঘর বাঁধার আশায় ভারতে গিয়েও সুখে সংসার করা হয়নি তার। নির্মম কাঁটাতারের বেড়ার কারণে এমন কষ্টের পরও ঘর বেঁধেছেন অনেকে। জেলার সীমান্ত গ্রাম গুলোতে ১০-১৫ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে ঘর বেধেছেন। তারা ভালবেসে ঘর পেয়েছে। কিন্তু আত্মীয়তার অবাধ মেলামেশার বড় বাধা কাঁটাতারের বেড়া।
শুধু রুবেল ও রিনা খাতুন নয় মেহেরপুর সীমান্ত গ্রামের এমন শতাধীক ছেলে-মেয়ে দুই বাংলার মধ্যে বিয়ে করে সেতু তৈরী করেছেন।
রুবেল জানান, ২০১৫ সালে ভারতের নদীয়া জেলার চিলখালী গ্রামে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পরিচয় হয় রিনা খাতুনের। এরপর মন দেওয়া নেওয়া, ভালবাসা। কিন্তু বিয়ে ও সংসারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তারকাঁটা। রাতের অন্ধকারে ভালবাসার মানুষ রিনা খাতুনকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন রুবেল হোসেন। এরপর সুখের সংসার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে রিনা খাতুন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
অন্যদিকে একই উপজেলার জাকির হোসেনের ভালবাসা হার মানে তারকাঁটার কাছে। সীমান্ত জমিতে কাজ করার সময় তারকাঁটার উপারে বসবাসকারী সাবিনা খাতুনের সাথে মন দেওয়া নেওয়া। এরপর ফোনের মাধ্যমে কথা চলে বেশ কয়েক বছর। প্রতিদিন সীমান্ত এলাকায় এসে দেখা হলেও ঘর বাধা হয়নি তাদের। তারকাঁটার কারণে তাদের প্রেম বিসর্জন দিতে হয়েছে। এখনো ভালবেসে চলেছেন। না পাওয়ার কারণ হিসেবে তারকাঁটাকে দায়ী করছেন জাকির হোসেন।
সীমান্ত গ্রাম হরিরামপুরের যুবক রুবেল হোসেন জানান, খালাতো বোনকে ভালবেসে আজো পথ চেয়ে আছে। প্রতিদিন কাঁটাতারের কাছে গিয়ে দু’জনে দেখা করলেও ঘর বাধতে পারছেন না তারা। কাঁটাতার যেন তাদের ভালবাসার বড় বাধা। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন তিনি। এখনো ভালোবাসা খুঁজে ফেরেন তিনি।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজামাল জানান, অনেক বাংলাদেশি ছেলে-মেয়ে ভারতের সীমান্ত গ্রাম গুলোতে ভালবাসার টানে গিয়ে ঘর সংসার করছেন। ১০-১৫ বছর আগে জেলার বেশীর ভাগ সীমান্তে কোনো ধরনের তারকাঁটা ছিলনা।
এজন্য দু’পাড়ের মানুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক ছেলে-মেয়ে বিয়ে করে দু’পাড়ে গিয়ে সংসার করছে। এখন প্রতি বছর হলি উৎসবের দিনে ভারতীয় তারকাঁটার গেট কয়েক ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। এ সময় দুই দেশের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।https://www.youtube.com/watch?v=5GnykzhktUQ
No comments:
Post a Comment