চীনের প্রথা অনুযায়ী প্রতিটি নতুন বছরকে একেকটি প্রাণির নামে নামকরণ করা হয়। শুক্রবার শুরু হওয়া নতুন বছরটি তেমনি নামকরণ করা হয়েছে কুকুরের নামে। যদিও জন্তু জানোয়ারের প্রতি সদয় দেশ নয় বলে চীনের বদনাম আছে।
চীনের নতুন বছর কুকুরের নামে নামকরণ হওয়ায়, পোষা প্রাণির যত্নে গড়ে ওঠা খাতে তা নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণীর যত্নে দেশটির নাগরিকেরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন। দেশটিতে এখন কুকুরের জন্য পাঁচ তারা হোটেলও আছে, যেখানে কুকুরের জন্য সিনেমা হল, সুইমিং পুল এবং থাকার জন্য বিলাসবহুল কামরাও রয়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতা দেখেছেন কুকুরের জন্য নির্মিত চীনের একটি পাঁচ তারা হোটেলের মিনি থিয়েটারে দেখানো হচ্ছে, কুকুর নিয়ে তৈরি সিনেমা। দর্শক অল্প কয়েকটি কুকুর এবং তাদের মালিকরা।
তিয়ান উ নামে একজন এসেছিলেন সেখানে নিজের প্রিয় কুকুর অস্কারকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, এখানে কুকুর এবং তাদের মালিকেরা একসঙ্গে সিনেমা দেখতে পারে এবং পরস্পরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারছে। পুরো বিষয়টি খুবই সুন্দর। আর এটা আমার কাছে জরুরি বলেই মনে হয়।
মুভি থিয়েটারে কুকুরের দৃষ্টিশক্তি অনুযায়ী দূরত্বে সিনেমার পর্দা বসানো হয়েছে, এবং আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে এমনভাবে যেন তাদের চোখের ক্ষতি না হয়। এছাড়া বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে কুকুরের জন্য আরামদায়ক ভাবে, অর্থাৎ গদি বানানো হয়েছে একটু চওড়া ভাবে যাতে একজন মালিক কুকুরটিকে পাশের আসনে বসিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন।
এসব শুনতে যত মনোহর, কিন্তু এই হোটেলে আসা কুকুরের দেখভাল করার ব্যাপারটি তত সহজসাধ্য নয়। মানে এই অভিজাত কুকুরদের দেখাশোনার পেছনে এর মালিকদের বহু অর্থ ব্যয় করতে হয়।
চীনের নাগরিক জীবনে গত কয়েক বছরে ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশটির এক সন্তান নীতির কারণে পরিবারগুলো ক্রমে ছোট হয়ে গেছে, সন্তান বড় হয়ে যাবার পর অনেকে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন। অনেকের জন্যই কুকুর এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।
ঝ্যাং লেই নামে একজনের কুকুরের নাম জাম্পিং বীনকে নিয়ে। তিনি ব্যাখ্যা করছেন, কেন কুকুরের জন্য খরচ করতে পিছপা হননা তিনি। বলেন, এই কুকুরটি আমার ভীষণ প্রিয়। সে আমার আত্মার রোজকার ভালোমন্দের একটি বিরাট অংশ হয়ে উঠেছে। ও একেবারে আমার সন্তানের মত। ওকে আনন্দে রাখার জন্য, ওর জন্য পয়সা খরচ করতে আমার ভালোই লাগে। এজন্য শুধু এখানে না, আমি ওকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় যাই, ঘুরে বেড়াই।
চীনে পাঁচ কোটির বেশি পোষা কুকুর আছে। দেশটির প্রানী কল্যান সংস্থাগুলো বলছে, জন্তু জানোয়ারের কল্যানে চীনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রানীর যত্নআত্তিতে চীনাদের খরচ বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পশুপালন বিষয়ক অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পোষা প্রানীর যত্নে চীন বছরে আড়াই শো কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করছে। বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বে এক্ষেত্রে চীন হবে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয়কারী দেশ।
ললিপপ নামে কুকুরের মালিক বলেন নিজের আয়ের একটা বড় অংশ তিনি নিজের পোষাপ্রানীর পেছনে ব্যয় করেন। তিনি বলেন, আমার কর্মক্ষেত্রে আমাকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়, রোজ প্রচুর সময় দিতে হয়। এর ফলে আমার কুকুরটি বাড়িতে একলা সময় কাটায়, আর আমার জন্য অপেক্ষা করে। এটা প্রাণিটির প্রতি রীতিমত নির্মম আচরণ। বিষয়টি নিয়ে আমার মধ্যে ভীষ অপরাধবোধ কাজ করে। ফলে অবসর সময়ে আমি নিয়ম করে ওকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাই।
দেশটির যেকোন শপিং মলে এখন পোষা প্রানীর কর্নারে পাওয়া যাবে কুকুরের ব্যবহার্য অভিনব সব জিনিসপত্র। কুকুরের বসার বা শোয়ার আসন আছে। এমনকি কুকুরের বসার জন্য অভিজাত নকশার সোফাও দেদার বিক্রি হচ্ছে।
একই সঙ্গে রয়েছে শোওয়ার বা বসার বাহারি কুশন, বিশেষ রুম ফ্রেশনার, গায়ে উকুন হওয়া ঠেকানোর শ্যাম্পু, সুগন্ধি মোমবাতি, কুকুরের ঘরের জন্য বানানো বিশেষ আলোর মত পন্য।
নতুন বছরকে তারা একেক বছর একেকটি প্রাণীর নামে নামকরণ করে থাকে। নির্দিষ্ট ১২টি প্রাণীর নাম ঘুরেফিরে রাখা হয় একেক বছর। এ বছরকে চীনা ক্যালেন্ডার মতে চায়নিজ নিউ ইয়ার শুরু হয়েছে কুকুর বর্ষ হিসেবে। বাকি ১১টি প্রাণি হচ্ছে- ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ভেরা, মোরগ, কুকুর এবং ভাল্লুক।
সূত্র: বিবিসি
No comments:
Post a Comment