'‌আমার ছেলে মরে যাক, ও জান্নাতে যাবে' - জিনিয়াস ২৪ বিডি

নতুন কিছু জানতে সব সময় চোখ রাখুন

Smiley face

সর্বশেষ

Home Top Ad

For add : 01689145308

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday 24 February 2018

'‌আমার ছেলে মরে যাক, ও জান্নাতে যাবে'

সিরিয়ার পূর্ব ঘোতা অঞ্চলে দেশটির সরকারি বাহিনীর হামলায় আহত এক শিশু। ছবি : বিবিসি


আজ নিয়ে সাত দিন। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অবিরাম বোমা বর্ষণে দেশটির পূর্ব ঘোতা অঞ্চলের অবস্থা এখন শ্মশানের মতো। থেমে থেমে বোমা বিস্ফোরণ, মানুষের আর্তচিৎকার-বিলাপ আর অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে ভারি হয়ে উঠেছে চারদিক। বাতাসে পোড়া বারুদের গন্ধ, ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপাপড়া লাশ আর একরাশ আতঙ্ক নিয়ে কাটছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে অবস্থিত এই অঞ্চলটির বাসিন্দাদের প্রতিদিন।

কেন এই হামলা

সিরিয়া এককভাবে কোনো গোষ্ঠী, সরকার বা দলের নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশটির উত্তরাঞ্চল রয়েছে পিকেকে, ওয়াইপিজি ও এসডিএফ-এর মতো বিভিন্ন কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে। দক্ষিণাঞ্চল শাসন করছে সিরিয়া সরকারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু অঞ্চল দখল করে রেখেছে কয়েকটি বিদ্রোহী দল ও ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এমনই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত একটি অঞ্চল পূর্ব ঘোতা। ৪০ হাজার বাসিন্দার এই অঞ্চলটি ২০১৩ সাল থেকে অবরোধ করে রেখেছিল সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। কারণ আসাদ নিয়ন্ত্রিত রাজধানী দামেস্কের কাছেই বিদ্রোহীদের পূর্ব ঘোতা সরকারের জন্য হুমকি।

গত সোমবার থেকে সেখানে বিমান ও মর্টার হামলা চালানো শুরু হয়। হামলায় আসাদ সরকার পাশে পায় মিত্র রাশিয়াকে। ছয় দিনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০৩ জন নিহত হয়েছে বলে জনিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস। তাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৫০ জন। আর আহতের সংখ্যা ২ হাজার ১২০ জন।

বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব, মরলে একসঙ্গে মরবো

পুর্ব ঘোতার বাসিন্দা নিসমা আল-হাতরি। স্বামী ও ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে মোকাবিলা করেছেন মৃত্যুকে। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন—এই প্রতিকূলতার মধ্যে কীভাবে কাটছে তাদের জীবন।

নিসমা বলেন, ‘বোমা ফেলা হয়, আশপাশে পড়া গোলার আঘাতের প্রভাব আমাদের বাসায়ও পড়ে। সেগুলো পরিষ্কার করি। তারপর একই ঘরের মধ্যে সবাই লুকিয়ে থাকি। বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচবো, মরলে একসঙ্গে মরবো।’

‘আমার ছোট্ট মেয়ে সারা আর আমি একই বিছানায় ঘুমাই। সে আমার গলা জড়িয়ে ধরে জানতে চায়—কেন সে স্কুলে যেতে পারে না, কেন খেলতে যেতে পারে না, কেন বান্ধবীদের কাছে যেতে পারে না? আমি আর কী জবাব দেব?’

৩২ বছর বয়সী নিসমা একটি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। কিন্তু জীবন তো আগে। বোমার ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে সারা ও প্রতিবেশীদের সন্তানদের এখনো পড়ান তিনি। তার স্বামী কিছু যোগাড় করতে পারলে খাওয়া হয়, না পারলে হয় না। অথচ কিছু দিন আগেও পরিস্থিতি এতোটাও খারাপ ছিল না বলে জানান নিসমা।



আমার ছেলে মরে যাক, ও জান্নাতে যাবে

পূর্ব ঘোতায় মানুষের ওপর মানুষের নিষ্ঠুরতায় সবচেয়ে বেশি চমকে গেছে সেখানের শিশুরাও। নির্মমতার বিভিন্ন দৃশ্য চোখের সামনে দেখে কথা বলা ভুলে গেছে তারা। বিবিসির এক ভিডিওতে উঠে এসেছে এমনই কিছু মূহুর্তের চিত্র।

সেখানে দেখা যায় নুর ও আলা নামের দুই বোনকে। তাদের বাড়িতে মাত্রই আঘাত হেনেছিলো একটি বোমা। আতঙ্কে-ভয়ে কথা বলতে পারছিলো না ছোট্ট ওই দুই শিশু। অস্ফুস্টভাবে একটা কথাই বলেছিল, ‘ঘোতাকে রক্ষা করো।’

ভিডিওটিতে দেখা যায়—মৃত শিশু সন্তানের লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে অসহায় এক বাবার পায়চারি, অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের পথে যাওয়া একটি কোলের শিশুর রক্তাক্ত মুখ আর নিষ্পাপ চোখ, হাসপাতালের বিছানায় বসে থাকা এক শিশুর কাঁদতে ভুলে যাওয়া চেহারা, বোমার আঘাতে মৃতপ্রায় সন্তানের জন্য এক মায়ের আহাজারি।

সন্তানের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মা। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার ছেলে মরে যাক। এতে অন্তত সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। আমি ওর জন্য রুটি বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ ছাদ ভেঙে পড়লো। মরে গেলে ও জান্নাতে যাবে। সেখানে অন্তত খাবার তো পাবে।’

মায়ের ওই আর্তচিৎকারে কান্নায় ভেঙে পড়েন পাশে থাকা এক চিকিৎসক।

একবার আল্লাহকে চিৎকার করে ডাকছে, আরেকবার মানুষদের ডাকছে 

‘সন্তানদের লাশের বুকের ওপর মাথা দিয়ে মা-বাবা কাঁদছে, একজন বাবা তার পা কেটে আলাদা হয়ে যাওয়া সন্তানকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ একবার আল্লাহকে চিৎকার করে ডাকছে, আরেকবার মানুষজনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে, শুধু ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপাপড়া পরিবারের সদস্যদের বাঁচানোর জন্য... আমাদের চারপাশের বিভীষিকা দেখে মনে হয় ওই মানুষগুলোর পাশে বসে বসে কাঁদি, কিন্তু তাদের স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টাটাই আগে করি।’—কথাগুলো বলছিলেন পূর্ব ঘোতা শহরের গ্যারেজ মেকানিক রাফাত আল-আবরাম।

আল-জাজিরাকে আবরাম বলেন, তিনি যেখানে কাজ করতেন সেই গ্যারেজটি বোমায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তাও তিনি সেখান থেকে কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে পেরেছেন। সেগুলো দিয়েই চলতি পথের গাড়ি ঠিক করেন। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করতে হয়। কারণ, সারাদিন বোমার আঘাতে আহত-নিহতদের বহন করতে সেগুলোও বিকল হয়ে যায়।

শত্রু কি শুধুই বোমা

পূর্ব ঘোতা অবরুদ্ধ সেই ২০১৩ সাল থেকে। অঞ্চলটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সাহায্যকারী সংস্থাকে প্রবেশ করতে দেয় না সিরীয় বাহিনী। তাই সেখানে পৌঁছাতে পারে না প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী নানা জিনিস। ঘোতার অবস্থা এখন এমন হয়েছে একটি রুটির প্যাকেটের দাম ৪০০ টাকা (৫ মার্কিন ডলার)।

প্রয়োজনীয় খাবার না পাওয়ায় অপুষ্টির শিকার হচ্ছে পূর্ব ঘোতার মানুষ। জাতিসংঘের মতে, ওই অঞ্চলে পাঁচ বছরের নিচের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার। মানুষের জন্য হাসপাতাল সুবিধাও কমে আসছে। কারণ আসাদ বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়েছে অনেক হাসপাতাল।

অসহায় মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

পূর্ব ঘোতার অবস্থা ‘বিপর্যয়কর’ বলে উল্লেখ করেছেন সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মাহমুদ আদম।

আল-জাজিরাকে আদম জানান, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। বাদ পড়ছে না বাড়ি-ঘর, স্কুল, হাসপাতাল, বাজার এমনকি বেসামরিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনও। এই এলাকায় মানুষজনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সবাই জানেন, এটা মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই। মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’



জাতিসংঘ কী করছে

পূর্ব ঘোতার এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও। গতকাল শুক্রবার কুয়েত ও সুইডেনের প্রস্তাবনায় একটি বৈঠক ডাকে বিশ্বসংস্থাটি। সেখানে পূর্ব ঘোতায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুদ্ধ বিরতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র জোরালো সমর্থন জানালেও, এতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি সিরিয়া ও মিত্র দেশ রাশিয়া। তাদের আবার সমর্থন করে সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ফলে পিছিয়ে যেতে থাকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত।

এ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লেভরভ শুক্রবার বলেন, সিরিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাশিয়া। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হ্যালে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জাতিসংঘের ওপর বার বার চাপ দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সিরিয়া ও রাশিয়ার অনাগ্রহ পূর্ব ঘোতার মানুষের সামনের দিনগুলো অনিশ্চিত করেই রাখবে।   

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here
Top